লানসা-ব্র্যাকের সমাপনী সেমিনারে তথ্যঃ হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় অপুষ্টি বেশি, পরিবারপিছু আয়ও ১৬ শতাংশ কম
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। ২৩শে জুলাই, ২০১৮। লানসা-ব্র্যাকের সমাপনী সেমিনারে তথ্য হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় অপুষ্টি বেশি পরিবারপিছু আয়ও ১৬ শতাংশ কম দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যেখানে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ৩০.৯ শতাংশ, সেখানে হাওরে এই হার ৪৬.৬ শতাংশ। হাওরে কম ওজনের শিশুর হার ৪৪.৫ শতাংশ। অথচ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই হার ৩৪.১ শতাংশ। আবার বন্যাপ্রবণ এলাকায় পরিবারপিছু আয় অন্য এলাকার পরিবারের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম। জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা ও স্বতন্ত্র ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় এ চিত্র লক্ষ্যণীয়। আজ সোমবার (২৩শে জুলাই, ২০১৮) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা’ শীর্ষক সমাপনী সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক গবেষণা অংশীদার ল্যাভারেজিং এগ্রিকালচার ফর নিউট্রিশন ইন সাউথ এশিয়া (লানসা) ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউকেএইড। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন- এর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন-এর পরিচালক ডা. সমীর কান্তি সরকার, ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক প্রফেসর আব্দুল বায়েস প্রমুখ। সেমিনারে সমীক্ষার বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, গ্রামীণ জনপদে শস্য ও খাদ্যবৈচিত্র্য এবং পুষ্টিমানের বিষয়টি পরস্পর ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত। দেখা যায়, খাদ্যবৈচিত্র্য ও পুষ্টিমানের দিকে লক্ষ্য রেখে উৎপাদন বাড়ালে কম ওজনের জনসংখ্যার হার হ্রাস পেতে থাকে। অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি বক্তারা পুষ্টি নিশ্চিতকরণে বৈচিত্র্যময় খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহী করে তোলার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান। সেমিনারে ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই লক্ষ্য অর্জন ও সামগ্রিক উন্নয়নে প্রক্রিয়ায় আমাদের কৃষি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, শ্রমিক দুষ্প্রাপ্যতা, বন্যা ও আকস্মিক বন্যা, শিলা বৃষ্টি, জলোচ্ছাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশের কৃষি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে। তিনি বলেন, কৃষি আমাদের সরাসরি খাদ্য ও পুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আমরা এখন টেকসই কৃষি ব্যবস্থা ও পুষ্টি নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে এ লক্ষ্যপূরণে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সমীর কান্তি সরকার বলেন, অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্য শিক্ষাও জরুরি। পুষ্টি নিশ্চিত করতে খাদ্য জ্ঞান থাকতে হবে। তবে এইক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে আমরা আরও উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হব। ইমরান মতিন বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এগুলো হচ্ছে: এবিষয়ক তথ্যপ্রাপ্তিকে আরও সহজতর করা, কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া এবং মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। বাংলাদেশে লানসার কার্যক্রম নিয়ে সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো বর্ণালী চক্রবর্তী। এছাড়া ‘কৃষি ও পুষ্টি : বাংলাদেশে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কার্যক্রম’ নিয়ে আরেকটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেন FAO' সিনিয়র পুষ্টিবিদ ড. ললিতা ভট্টাচার্য। সেমিনারে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি নিয়ে আরও একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি প্রধান ডা. মাহফুজা রিফাত। অনুষ্ঠানে দরিদ্রদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণে বেশ কিছু করণীয় বিষয় তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে: স্কুল নিউট্রিশন কর্মসূচি, দুধ পানকে আরও উৎসাহিত করা এবং খাদ্য গুদামজাতকরণের দিকে অধিকতর মনোযোগী হওয়া। বক্তারা পুষ্টি উন্নয়নে দুর্গম এলাকা ও ভৌগলিক অবস্থানভেদে এবং দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ধরণের কর্মসূচি নেওয়ার সুপারিশ করেন।